প্রথমবার সাঁতার সেন্ট মার্টিনে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটি। সেখানেই একদিন (বাংলা চ্যানেলজয়ী সাঁতারু সাইফুল ইসলাম) রাসেল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। তাঁর কাছেই চ্যানেল সম্পর্কে প্রথম সবক পেলাম। তারপর নিজেও তৈরি হতে শুরু করি। কিন্তু ২০২০–২১ সালে করোনার কারণে অভিযানে যাওয়া হলো না। ২০২২ সালে সব প্রস্তুতি নিয়েও পায়ের আঘাতের কারণে পরিকল্পনা বাতিল করতে হলো। ২০২৩–এ ‘১৮তম বাংলা চ্যানেল সাঁতার’-এ অংশ নেওয়ার সুযোগ তাই কোনোভাবেই হারাতে চাইছিলাম না। আমার প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এগিয়ে আসায় কাজটা আরও সহজ হলো।
আমি এমনিতেই ধীরগতির সাঁতারু। রোজ পুলে সাঁতার কেটেও তাই মন ভরছিল না। তা ছাড়া খোলা পানিতে কোনো দিন সাঁতারও কাটিনি। শুধু ‘বদ্ধ’ অভিজ্ঞতা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে সাঁতার কাটতে যাওয়াটা উচিত হবে না। তাই পুকুরে নামার সিদ্ধান্ত নিলাম। তত দিনে ঢাকাতেও শীত পড়তে শুরু করেছে। তবু সকাল সাড়ে ছয়টা কি সাতটার মধ্যে জহুরুল হক হলের পুকুরে নেমে পড়ি। দুই থেকে তিন ঘণ্টা টানা সাঁতার কাটি। এভাবে অনুশীলন করতে করতেই ডিসেম্বর চলে আসে। সময় যত ঘনিয়ে আসে, তত বাড়তে থাকে চিন্তা। স্কুলের গণিত পরীক্ষার আগের রাতের মতো মনে ভয় ভর করতে থাকে।
প্রিয় মানুষদের দেওয়া সাহসকে পুঁজি করে ২৫ ডিসেম্বর টেকনাফের বাসে উঠে বসি। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউ দেখে মনে সংশয় উঁকি দিল, পারব তো!
সেদিনই সবার সঙ্গে অনুশীলন করতে টেকনাফের সৈকতে গেলাম। পাড়ে বসে বিশাল ঢেউ দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, এই উন্মাতাল ঢেউ কীভাবে সামাল দেব! অভিজ্ঞ দু-একজন পরামর্শ দিলেন, ঢেউয়ের নিচ দিয়ে যেতে হবে, ওপর দিয়ে গেলেই নাকানিচুবানি খেতে হবে।
সাঁতার শুরুর আগে অন্যদের সঙ্গে একটু ব্যায়াম করে নিলাম। তারপর পানিতে নেমে পড়লাম। প্রথম দু-একটা ঢেউ ভালোমতোই পার করলাম। তৃতীয় ঢেউ আসতেই তাল হারিয়ে ফেললাম। দুই ঢোঁক পানি খেতে হলো। বিশুদ্ধ লবণপানি! তারপরও সাহস না হারিয়ে গভীরে যেতে থাকলাম। বিশাল সমুদ্রের বুকে একসময় দেখি আমি সবার শেষে। ভয় করছিল। তখন রাসেল ভাইয়ের কথাটা মনে পড়ল। নামার আগে আগে তিনি বলেছিলেন, ‘সামনের জনকে অনুসরণ করবে।
ঘণ্টা দুয়েক সাঁতারের পর আমার নেভিগেটরকে (বোটে থেকে যাঁরা দিকনির্দেশনা দেন) ধীরগতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বললাম, আমি স্লো সাঁতারু, তাঁরা যেন আমাকে একটু বেশি সাপোর্ট করেন। নেভিগেটর আশিক ভাই বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি স্লো আছেন, তবে আপনার পেছনে আরও দুজন আছে!’
কথাটা শুনে মনে আশার সঞ্চার হলো। সাহসও দ্বিগুণ বাড়ল। সাঁতারের গতি বাড়িয়ে দিলাম। এর মধ্যে খেজুর আর পানি খেয়ে নিলাম। তবে লবণপানি মিশে যাওয়ায় কলা আর খেতে পারিনি।
৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট এভাবে সাঁতার কাটলাম। একসময় সৈকতের বালু দৃশ্যমান হলো। ততক্ষণে আমার হাত–পা আর চলে না। উচ্চতার কারণে পায়ের তলে বালুর নাগাল পেতে অন্যদের চেয়ে আমাকে একটু বেশিই সাঁতার কাটতে হলো। এভাবেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মাটিতে পা রাখলাম। প্রথমবারের মতো সেন্ট মার্টিনে পৌঁছালাম, তা–ও সাঁতার কেটে।
Source Prothom Alo
0 comments:
Post a Comment